স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে নার্স নির্ভর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ২৪ শয্যা বিশিষ্ট দু’টি আইসিইউ ওয়ার্ড। যার ফলে মহামারি করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সময় রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের একমাত্র অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক ডা. নাজমুল হুদাকে। শুধু যে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় এমনটা নয়, দক্ষ কোনো জনবল না থাকায় আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেটর মেশিনসহ এখানে যেকোনো কিছুতে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিলে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। আর এসব সমস্যা নিরসনে আইসিইউ বিশেষজ্ঞসহ দক্ষ জনবল নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শেবাচিম হাসপাতালের আউটডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সৌরভ সুতার জানান, শেবাচিম হাসপাতালের আইসিইউ’র জন্য আলাদাভাবে দক্ষ কোনো জনবলই নেই। এটি অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসকরা চালাচ্ছেন। যদিও আইসিইউ অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসকরাই পরিচালনা করেন এবং এজন্য তাদের প্রশিক্ষণও নিতে হয়। আর বরিশালে যিনি এ ওয়ার্ডটির দায়িত্বে রয়েছেন তিনিও আইসিইউ’র ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তবে একজন চিকিৎসক দিয়ে এটি চালানো কঠিন কাজ। আর আইসিইউ’র চিকিৎসক ডা. নাজমুল হুদা বলছেন, শেবাচিম হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসক বলতে তিনি একা। ফলে তাকেই ২৪ ঘণ্টা রোগীর সেবায় নিয়োজিত থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, মূলত নার্সদের (সেবক/সেবিকা) ওপরই শেবাচিমের আইসিইউ নির্ভরশীল। কারণ নার্সরা ছাড়া তার কাজে এ মুহূর্তে সহযোগিতা তেমন কেউ করতে পারছেন না। ডা. নাজমুল হুদা জানান, এখানে কিছু প্রশিক্ষিত নার্স রয়েছে। আর কিছু নার্সকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হচ্ছে। যারাই এ ইউনিটের রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন নিজেদের। তবে টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ানসহ দক্ষ জনবলের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) পাশাপাশি আরও কিছু মেশিনের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া আইসিইউতে যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি দেখা দিলেও তা লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে ঢাকায় জানাতে হয়, সেখান থেকে টেকনিশিয়ান এসে মেরামত করতেও সময় লাগছে অনেকটা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালের পূর্ব দিকের দোতলা ভবনে ২০১৭ সালে ২৩ জুলাই প্রথম আইসিইউ ওয়ার্ডের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০২০ সালের মে মাসে এসে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতালের পূর্ব দিকের পাঁচতলা নতুন ভবনে আরও একটি আইসিইউ ওয়ার্ডের যাত্রা শুরু হয়। সূত্র বলছে, পূরাতন আইসিইউ ওয়ার্ডটি বর্তমানে নন কোভিড আর নতুন ভবনের আইসিইউ ওয়ার্ডটি কোভিড রোগীদের জন্য ডেডিকেটেট করে পরিচালনা করা হচ্ছে। যার মধ্যে সাধারণ অর্থাৎ নন কোভিড ও করোনা ওয়ার্ড মিলিয়ে আইসিইউ শয্যা আছে ১২টি করে মোট ২৪টি। যার মধ্যে করোনা ওয়ার্ডের দু’টি ভেন্টিলেটর মেশিনে সম্প্রতি যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে একটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসে মেরামত করে দিতে পারলেও অন্যটি পারেনি। তবে শেবাচিম হাসপাতালের আইসিইউ’র দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের কাছ থেকে গেছে, হাসপাতালে ২৪টি আইসিইউ বেড থাকলেও ভেন্টিলেটর কিছুটা বেশি অর্থাৎ ২৮টির মতো রয়েছে। সেজন্য করোনা ওয়ার্ডের যে ভেন্টিলেটরটিতে ত্রুটি দেখা দিয়েছে, সেটিকে পাল্টে সাধারণ রোগীদের আইসিইউ ওয়ার্ডে বাড়তি থাকা একটি ভেন্টিলেটর মেশিন বসানো হয়েছে। যাতে করোনার ১২টি বেডই সচল থাকে। এছাড়া করোনা ওয়ার্ডের রোগীদের চিকিৎসা সেবায় ২২টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার মধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে ১৪টি। বাকি আটটির মধ্যে সরকারিভাবে পাওয়া চারটি শুরু থেকেই যান্ত্রিক ত্রটির কারণে কাজে লাগানো যায়নি। যদিও নতুন করে আরও সাতটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একা হওয়ায় করোনার গেল এক বছরে মাঝে মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু পরিস্থিতির শিকার হতে হলেও হাসপাতালের আইসিইউ’র দায়িত্বে থাকা ডা. নাজমুল হুদা বলেন, বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের পরও রোগীদের সেবা শতভাগ নিশ্চিত করা হচ্ছে শেবাচিমের আইসিইউ ওয়ার্ডে। আবার নতুন করে করোনা ওয়ার্ডে আরও ১০টি আইসিইউ শয্যা চালু করার উদ্যোগে গ্রহণ করা হয়েছে। আইসিইউর বেশির ভাগ যন্ত্রাংশসহ শয্যাগুলো ইতোমধ্যেই তারা হাতে পেয়েছেন। তবে স্বয়ং সম্পূর্ণভাবে আইসিইউ চালাতে হলে চিকিৎসকসহ সব জনবলের প্রয়োজনীতার কথা জানান তিনি। এ বিষয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নেবে। এখন যে জনবল রয়েছে তা দিয়ে চেষ্টা চলছে রোগীদের সেবা শতভাগ নিশ্চিত করার। শেবাচিম হাসপাতালের নার্সিং দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ হাসপাতালে আইসিইউ পরিচালনার জন্য ১৭ জন নার্স প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রয়েছেন। এছাড়া সম্প্রতি আরও ২০ জন নার্সকে আইসিইউতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সঙ্গে কাজ করিয়ে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি বিভাগের মধ্যে ভোলা ও পটুয়াখালীতে আইসিইউ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেজন্য ওইসব জায়গাতেও প্রশিক্ষিত জনবলের প্রয়োজন রয়েছে। আর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ভোলা হাসপাতাল ও পটুয়াখালী হাসপাতালের জন্য যে জনবলের প্রয়োজন রয়েছে তা মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
Leave a Reply